কার্ডিং
শব্দটা অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। আসলে কার্ডিং একটা প্রচলিত শব্দ।
আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে আপনার
টাকা হাতিয়ে নেওয়াকে কার্ডিং বলে।
কার্ডিং শব্দটা সাধারণত ব্যবহৃত হয় যারা এই কাজ করে তাদের মধ্যে সাংকেতিক ভাষা হিসাবে। আমাদের প্রচলিত ভাষায় ‘ফ্রড ট্রানজেকশন’।
আপনার কার্ডের তথ্য পায় কীভাবে?
এটা একটা বড় প্রশ্ন। অনেকেই বলে আমার কার্ডের তথ্য পায় কীভাবে? আমি তো
বাংলাদেশে থাকি একজন আফ্রিকা থেকে আমার তথ্য পায় কীভাবে? তাহলে ব্যাংকিং
সিস্টেম কী নিরাপদ না? আপনার তথ্য কি ব্যাংকের কাছে নিরাপদ না। হাজার হাজার
আইটি সিকিউরিটি প্রফেশনাল কী করেন? এই সবগুলোর উত্তর আমি দিচ্ছি ও বলে
দিচ্ছি কীভাবে আপনার তথ্য তাদের কাছে চলে যায়?
আপনার সব তথ্য ব্যাংকের
কাছে নিরাপদ। তারা লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করছে আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার
জন্য। এবং তাদের সিস্টেমগুলো যথেষ্ট নিরাপদ। তারা কোনো পাবলিক হোস্টিং
কোম্পানি থেকে সার্ভার স্পেস ভাড়া নেয় না, যাতে সার্ভার কোম্পানির থ্রুতে
আপনার তথ্য ফাঁস না হতে পারে। তাদের পুরো সার্ভার নিজেদের কন্ট্রোলে থাকে ও
নিজেদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারে থাকে এবং ফিজিক্যাল সিকিউরিটি যথেষ্ট থাকে।
সফটওয়ারে সিকিউরিটিও থাকে। এরপরেও অনেক উচ্চ মানের হ্যাকার হলে সেটাও হ্যাক
করা যেতে পারে।
তাহলে ব্যাংকে যেহেতু তাদের সার্ভারের
ফিজিক্যাল ও সফটওয়্যার পুরো নিরাপত্তা দিয়েছে তাহলে কীভাবে আমার তথ্য
কার্ডিং যারা করে তাদের হাতে চলে যায়?
এর একটা সাধারণ উত্তর হচ্ছে, এর জন্য আপনি দায়ী।
খুবই কম ক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার কার্ডের তথ্য কাউকে না দেন তাহলে
ব্যাংকের ডাটাবেইজ থেকে সরাসরি কার্ডারদের হাতে চলে যাওয়ার চান্স থাকে।
তাহলে কীভাবে যায়?
এটার উত্তর হচ্ছে আপনি কোনো না কোনোভাবে আপনার কার্ডের তথ্য তাদের দিচ্ছেন।
এই ইনফরমেশন কিভাবে পায় আপনার কাছ থেকে?
১। কোনো ফিসিং সাইট থেকে: এই ধরনের সাইটগুলো সাধারণত কোনো সোস্যাল মিডিয়ার
বা মেইলের মাধ্যমে লিংক ছড়ায়। জিনিসগুলোয় থাকে কোনো অফার। যেমন আপনাকে
কোনো চার্জ করা হবে না। শুধু আপনার ক্রেডিট কার্ড নম্বর দিন আমরা আপনাকে
যাচাই করার জন্য আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চাচ্ছি, এইসব মন ভুলানো
কথাবার্তা বলে আপনার কার্ডের তথ্য তাদের ডাটাবেইজে নিয়ে নেয়।
২। পর্ন সাইট থেকে
৩। ডেটিং সাইট
৪। জব সাইট
৫। ই-কমার্সে : গুগলে সার্চ দিলে দেখছেন এই সবগুলো সফটওয়্যারে পেইড। কোনো
ফ্রি নাই। এর মধ্যেই কিছু লিংক পাবেন যারা বলবে আমরা তোমাকে ৩০ দিনের
ট্রায়াল দিব। কিন্তু তোমাকে ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন দিতে হবে। আর ইনফরমেশন
দিলেই আপনার সব তথ্য তাদের কাছে চলে যাবে।
আসলে এভাবেই আপনার ইনফরমেশন কার্ডাররা পেয়ে থাকে।
কোথায় বিক্রি হয় এই কার্ড?
আপনি চমকে যাবেন যে, এই কার্ডগুলো বিক্রির জন্য রীতিমতো কিছু অনলাইন শপ আছে। তাদের মধ্যে কিছু দিচ্ছি আমি-
১। http://ug4all.ru/
২। https://www.basecard.ru/
৩। https://jshop-net.cc/login/
৪।https://ccbox.su/Login.php
এইগুলো কিছু উদাহরণ। এই সাইটগুলোয় আপনি একটা নরমাল মেইল দিয়ে সাইন আপ করে
দেখতে পারেন যে, কীভাবে সেখানে আপনার কার্ডের বাণিজ্য হচ্ছে। এইগুলো
সাধারণত হ্যাকারদের মার্কেটপ্লেস।
এই কার্ডের তথ্যগুলো দিয়ে কী করে কার্ডাররা?
সাধারণত এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে জুয়া খেলা হয় আর সেখান থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া হাজারও রকমের কাজ হয়। চলুন তালিকা দেখি-
১। অনলাইন জুয়া।
২। অনলাইনে কোনো সফটওয়্যারে কেনা।
৩। এক মেথড থেকে আরেক মেথডে ট্রান্সফার করে। যেমন হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড
ইনফমেশন পেল, এর পর সেই ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে আরেকটা পেপাল
একাউন্ট খুলল।
৪। এফিলিয়েট করে
৫। এডাল্ট এফিলিয়েট করে: অনেক
পর্নো সাইট আছে বা ডেটিং সাইট আছে, যারা তাদের পণ্য বিক্রি করে দিলে, মানে
তাদের মেম্বার বানিয়ে দিলে ৩০ থেকে ৪০ ডলার কমিশন দেয়। সো এই ক্ষেত্রে
কার্ডাররা নিজেদের লিংক থেকে নিজেরাই কিনে এর পর কমিশন নেয়। যেমন ধরেন আপনি
১০০ ডলার দিয়ে ১০টা কার্ড কিনলেন। এর পর আপনি সেই কার্ড দিয়ে ৫টা এডাল্ট
এফিলিয়েট কোম্পানির মেম্বার হলেন। তাহলে আপনার কমিশন ৫x১০x৪০= ২০০০ ডলার।
আর এ জন্য আপনাকে খরচ করতে হয়েছে মাত্র ১০০ ডলার। আপনার এই ক্ষেত্রে কার্ড
হ্যাকিং করা জানতে হবে না। ক্রেডিট কার্ড শপ থেকে কার্ড কিনেই এই কাজ করতে
পারেন।
৬। ফ্লিপ কার্ট, এমাজান, ওয়ার্ল মার্ট, টিস্প্রিং সাইট থেকে
পণ্য কেনা: অনেকেই সরাসরি ফ্লিপ কার্ট, এমাজান, ওয়ার্ল মার্ট, টিস্প্রিং এর
মতো সাইট থেকে পণ্য কিনে তার নিজ নিজ দেশেই শিপ করে।
৭। বিভিন্ন লোড: ফ্লেক্সি লোডের মতো মোবাইলে অনলাইনে লোড করে বিভিন্নভাবে টাকা আনা যায়।
৮। এভিয়েশনে: ধরেন আপনি ঢাকা টু কলকাতা যাবেন। একজন বলল ভাই আমাকে ২ হাজার
টাকা দিয়েন আমি আপনার টিকিট কেটে দিব। আপনি তো খুশিতে লাফাবেন। যেখানে
সাধারণত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগে সেখানে ২ হাজারে টিকিট। দেখা যাচ্ছে
আপনাকে সত্যি সত্যিই তারা ২ হাজারে টিকিট দিল এবং সেই টিকিট দিয়ে কলকাতাতে
ঘুরে বেরাচ্ছেন। আসলে ঐ ছেলেটা আরেকজনের কার্ড ১০ ডলারে কিনে আপনার টিকিট
কেটে দিয়েছে। আর আপনার থেকে ২ হাজার টকায় বিক্রি করল নিট লাভ ১২০০ টাকা।
৯। হোটেল/অনলাইন ফুড: অনেক হোটেল ও অনলাইনে খাদ্য কেনা যায়।এই অনলাইনে
তারা মানুষের কার্ড দিয়ে হোটেলে থাকছে ও বিভিন্ন ফুড কোম্পানি যেমন ফুড
পান্ডার মতো কোম্পানি থেকে খাবার এনে খাচ্ছে।
১০। ফ্রি-ল্যান্সিং
সাইটগুলো থেকে: এটা অনেকেই করে। একজনের কার্ড ব্যবহার করে ক্লাইন্ট সেজে
কাজ দেয় নিজেকে। এর পর সেখান থেকে কাজ দিয়ে সে কাজ কমপ্লিট করে। আর এই পাশ
থেকে টাকা তুলে নেয়।
এবার তো দেখলেন আপনার কষ্টে অর্জিত টাকা ব্যাংকে
রেখে সিকিউর ভাবছেন, আর আয়েশ করে কার্ডাররা কীভাবে আপনার তথ্য ব্যবহার করে
বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করছে।
আরো জানতে যেতে পারেন প্রিয় ডট কম এর এই লিংকে
http://goo.gl/lhaEDf
কার্ডিং কি?
in
কার্ডিং কি?
on 4:40 PM